সারা পৃথিবীর আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে এখন অনেক প্রতিযোগিতা।
অর্থনীতি, শিক্ষা, প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীর মানুষ সীমাহীন মানসিক চাপ এর মধ্যে জীবন যাপন করে।
শহর এলাকাগুলোতে নারীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বড় ডিগ্রী নিচ্ছেন, লেখাপড়া শেষে নিজের কর্মসংস্থানে যুক্ত হচ্ছেন। শহর এলাকাগুলোতে এই পরিসংখ্যান নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে বা শহরেও অনেক নারী পুরুষ এখনো পিছিয়ে আছেন।
প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের জায়গা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্র এখনো নারী পুরুষের সমান অধিকারের
নয় ।
যতোদিন পর্যন্ত নারী পুরুষের মাঝে সমান মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে না, ততোদিন পর্যন্ত নারীরা পেছনেই পড়ে থাকবে।
একদিকে টিকে থাকার লড়াই আরেক দিকে নারী পুরুষের বৈষম্য।
আমাদের দেশে অভাবী ও প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য নারীর এখনো নেয় স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের ক্ষমতা। পারিবারিক শান্তি টিকিয়ে রাখার জন্য এখানো অনেকেই বিভিন্ন ধরণের মানসিক আঘাত নীরতে সহ্য করেন। বছরের পর বছর এই ধরণের পরিস্থিতি বাড়িয়ে তোলে মানসিক চাপ। অসহ্য মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে হৃদরোগের ঝুঁকি, তৈরী করে উচ্চ রক্তচাপ। অনেক নারী কম বয়সে ডায়বেটিসেও ভোগেন। দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ রক্তে ডায়াবেটো-জেনিক হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটো-জেনিক হরমোন যা ডায়াবেটিস তৈরীর অন্যতম প্রধান একটি ফ্যাক্টর বা নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।
এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে রক্ষার জন্য মানসিক চাপ মুক্ত থাকাটা ভীষণ জরুরী। এই জন্য দরকার ধ্যান বা মেডিটেশান।
আমাদের দেশের শহরাঞ্চলের খুব সচেতন কিছু নারী পুরুষ ধ্যান বা মেডিটেশান করেন। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগন্য। আর গ্রামাঞ্চলের নারীরা খুব বেশি বঞ্চিত। মেডিটেশানের নামটাই হয়তো তারা সারাজীবনে শোনেন নি।
আমাদের সবাইকে ধ্যান বা মেডিটেশানের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝতে হবে। আমরা যদি নারী পুরুষ সবার মাঝে মেডিটেশান ছড়িয়ে দিতে পারি, তাহলে অনেক মানুষ উপকৃত হবে।
ধর্ম কর্ম মেডিটেশন
বা ধ্যান মস্তিস্কের জন্য ভীষণ উপকারি।
আমাদের মস্তিস্ক সব সময় কাজ করতেই থাকে। আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি তখনো কাজ করতেই থাকে। মস্তিস্ক সারা দেহের নিয়ন্ত্রন কক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করে। অর্থাৎ বিরামহীন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে।
আমাদের ঘুমানোর সময়, চোখ বন্ধ করে রাখার সময় বা ধ্যান করার সময় মস্তিস্কের বিশ্রাম হয়। এই বিশ্রামের ফলে মস্তিস্কের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তখন সারা দেহের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হয়ে ওঠে আরো বেশী শক্তিশালী। প্রতিটি মানুষকেই তার ধর্ম কর্ম বা মেডিটেশন করা উটিৎ। ধর্ম মানুষকে দেয় মানষিক প্রশান্তি। বাড়িয়ে দেয় তার কাজ করার স্পৃহা। মানুষ মানষিক ভাবে যতো বেশী শক্ত হবে, তার কাজ করার শক্তি ততোটাই বাড়তে থাকবে।
ধর্মের কিছু কাজ, ধ্যান বা মেডিটেশানের সময় মানুষ চোখ বন্ধ করে রাখে। ফলে চোখ, কপাল, ঘাড়, মাথা, চোখের চারিপাশের স্নায়ু ও মাংসপেশীর বিশ্রাম হয়।
ধ্যানের সময় মস্তিস্কের প্রতিটি কোষেরও বিশ্রাম হয়। তখন মাথা ব্যাথা, ঘাড়ে ব্যাথাও কমে।
মস্তিস্কের প্রতিটি প্রান্তে অক্সিজেন পৌছে যায়। এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শিরা উপশিরার মাধ্যমে সারা দেহে সঞ্চালিত হয়। এতে দেহের অন্যান্য অঙ্গগুলোরও পুষ্টি হয়। অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত দেহের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। পরিণামে কমে যায় স্ট্রেস হরমোন বা ডায়াবেটোজেনিক হরমোন।
মেডিটেশন বা ধ্যান মস্তিস্কের জন্য ভীষন উপকারী। আমাদের মস্তিস্ক সব সময় কাজ করতেই থাকে। আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি, তখনও কাজ করে। মস্তিস্ক সারা দেহের নিয়ন্ত্রণকক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ধ্যান বা মেডিটেশানের সময় আমাদের চোখ, মস্তিষ্কের বিশ্রাম হয়। এতে মস্তিষ্ক হয়ে ওঠে অধিক শক্তিশালী। প্রতিটি মানুষকেই তার ধর্ম-কর্ম, ধ্যান বা মেডিটেশান করা উচিৎ।
নারী পুরুষ সকল পরিণত বয়সের মানুষের জন্য মেডিটেশন ভীষণ জরুরী। আমাদের উচিৎ কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিজেরা ধ্যান করা, আত্মীয় স্বজনকে ধ্যানে প্রতিবেশী পরিচিতদের উৎসাহিত করা।
মস্তিস্কের বিশ্রাম হলে, মস্তিস্কে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন মস্তিস্কে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত, পুরো দেহ সঞ্চালিত হয়। এতে দেহের অন্যান্য অঙ্গগুলোও পুষ্টি পায়। তখন মানুষের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
উচ্চরক্ত চাপও নিয়ন্ত্রণে আসে। চোখের স্নায়ুগুলোর বিশ্রাম হয়।
নিয়মিত ধ্যান নামায বা মেডিটেশন করলে, হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত মেডিটেশন বা ধ্যান করেন, ধর্ম কর্ম করেন, তাদের রক্তে স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হয় কম। এই স্ট্রেস হরমোন হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, স্ট্রোকের ঝুঁকির জন্য দায়ী। স্ট্রেস হরমোন যতো কমবে মানুষের ত্বকও সুন্দর থাকবে। ধ্যান মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। তখন মানুষ কোন আঘাত পেলে তা নিয়ন্ত্রন করতে শেখে। চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা বা ধ্যান করার সময় আমাদের মাথা মুখ, ঘাড়, পিঠের মাংশ পেশীরও বিশ্রাম হয়। তখন ঘাড়ে ব্যথাও কমে যায়। তাই ধর্ম কর্ম, মেডিটেশন হোক আমাদের নিত্য সঙ্গী।
মেডিটেশানের গুরুত্ব সম্পর্কে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মহাজাতক সব সময় বলেন, প্রতিটি মানুষকে নিয়মিত মেডিটেশান করার জন্য। ধ্যান মানুষকে তার মন ও চিন্তা চেতনা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, বাড়িয়ে তোলে আত্মবিশ্বাস।
প্রতিযোগিতার তীব্র দৌড়ে জয়ী হবার জন্য সবার উচিৎ নিয়মিত ধ্যান করা। মস্তিষ্ককে আরো বেশী কর্মক্ষম করে তোলা। আর এই জন্য মিডিয়ার ভুমিকা অপরিহার্য্য। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালেই আমরা দেখতে পাবো, সেই দেশের নারী পুরুষেরা নিয়মিত হাটেন, ধ্যান করেন। ব্যস্ততার মাঝে কাজ করার সময় বের করাটা অনেক কঠিন। কিন্তু আমরা চেষ্টা করলেই পারবো। ধ্যান বা মেডিটেশান হোক আমাদের সবার নিত্য সঙ্গী।
ফারহানা মোবিন
চিকিৎসক, লেখক ও উপস্থাপিকা